SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - সংখ্যা পদ্ধতি ও ডিজিটাল ডিভাইস | NCTB BOOK

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত ভাষা এবং একই সাথে সংখ্যাকেও ব্যবহার করি। আমাদের প্রয়োজনের কারণে ভাষার সাথে সাথে আমরা সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি। সত্যি কথা বলতে কী অনেক প্রাণী এবং পাখিও অল্প কিছু গুণতে পারে। শুনে অবাক হয়ে যেতে হয় যে এখনো পৃথিবীর গহিন অরণ্যে এমন আদিবাসী মানুষ আছে যাদের জীবনে সংখ্যার বিশেষ প্রয়োজন হয় না বলে সেভাবে গুনতে পারে না। ব্রাজিলের পিরাহা নামের আদিবাসীরা এক এবং দুই থেকে বেশি গুনতে পারে না। এর চাইতে বেশি যে কোনো সংখ্যা হলেই তারা বলে ‘অনেক'।

আদিম মানুষ যখন শিকারী হিসেবে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত তখন হিসেব রাখা বা গোনার সেরকম প্রয়োজন ছিল না। যখন তারা কৃষিকাজ করার জন্য স্থিতু হয়েছে, গবাদি পশু পালন করতে শুরু করেছে, শস্যক্ষেত্রে চাষাবাদ করেছে, গ্রাম, নগর-বন্দর গড়ে তুলেছে, রাজস্ব আদায় করা শুরু করেছে তখন থেকে গোনার প্রয়োজন শুরু হয়েছে। সেজন্য সংখ্যা পদ্ধতির ইতিহাস এবং সভ্যতার ইতিহাস খুবই ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আমাদের প্রয়োজনের কারণে এখন আমরা অনেক বড় বড় সংখ্যা ব্যবহার করতে পারি, গণিতের সাহায্যে সেগুলো নানাভাবে প্রক্রিয়া করতে পারি।

আদিম কালে মানুষেরা গাছের ডাল বা হাড়ে দাগ কেটে কিংবা কড়ি, শামুক বা নুড়ি পাথর সংগ্রহ করে সংখ্যার হিসাব রেখেছে। তবে যখন আরো বড় সংখ্যা আরো বেশি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয়েছে তখন সংখ্যার একটি লিখিত রূপ বা চিহ্ন সৃষ্টি করে নিয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মোটামুটি একই সময়ে সুমেরিয়ান-ব্যবলিয়ান এবং মিশরীয় সভ্যতার শুরু হয় এবং এই দুই জায়গাতেই সংখ্যার প্রথম লিখিত রূপ পাওয়া গেছে। সুমেরিয়ান-ব্যবলিয়ান সংখ্যা ছিল ষাটভিত্তিক এবং মিশরীয় সংখ্যা ছিল দশভিত্তিক। ব্যবলিয়ান সংখ্যা পদ্ধতির রেশ পৃথিবীতে এখনো রয়ে গেছে, আমরা মিনিট এবং ঘণ্টার হিসেব করি ষাট দিয়ে এবং কোণের পরিমাপ করি ষাটের গুণিতক দিয়ে। সুমেরিয়ান-ব্যবলিয়ান সংখ্যা পদ্ধতিতে স্থানীয় মান ছিল, মিশরীয় সংখ্যা পদ্ধতিতে ছিল না। দুই পদ্ধতিতেই কোনো কিছু না থাকলে সেটি বোঝানোর জন্য চিহ্ন ব্যবহার করা হতো কিন্তু সেটি মোটেও গাণিতিক সংখ্যা শূন্য ছিল না।

পরবর্তীকালে আরো তিনটি সভ্যতার সাথে সাথে সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে উঠে, সেগুলো হচ্ছে মায়ান সভ্যতা, চীন সভ্যতা এবং ভারতীয় সভ্যতা। মায়ান সংখ্যা পদ্ধতি ছিল কুড়িভিত্তিক, চীন এবং ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি ছিল দশভিত্তিক। (আমাদের দেশে যেসব মানুষ লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি তারা কাজ চালানোর জন্য মৌখিকভাবে কুড়িভিত্তিক এক ধরনের সংখ্যা ব্যবহার করে থাকে।) মায়ান এবং ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিতে স্থানীয় মান ব্যবহার করে। প্রয়োজনের কারণে সব সংখ্যা পদ্ধতিতেই শূন্যের জন্য একটি চিহ্ন থাকলেও প্রকৃত অর্থে শূন্যকে একটি সংখ্যা হিসেবে ধরে সেটিকে সংখ্যা পদ্ধতিতে নিয়ে এসে গণিতে ব্যবহার করে ভারতীয়রা এবং এই শূন্য আবিষ্কারকে আধুনিক গণিতের একটি অন্যতম যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মায়ান এবং চীন সংখ্যা পদ্ধতি মাত্র দুই-তিনটি (চিত্র 3.1) চিহ্ন ব্যবহার করে লেখা হতো। কিন্তু হাতে লেখার সময় পাশাপাশি অসংখ্য চিহ্ন বসানোর বিড়ম্বনা থেকে বাঁচার জন্য ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিতে 1 থেকে 9 পর্যন্ত নয়টি এবং শূন্যের জন্য একটি চিহ্ন- এভাবে দশটি চিহ্ন ব্যবহার করতে শুরু করে। আমরা এই চিহ্নগুলোকে অঙ্ক বা Digit বলি।

২৫০০ বছর আগে গ্রিকরা ব্যবিলোনিয়ান এবং মিশরীয়দের সংখ্যা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তাদের পূর্ণাঙ্গ ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে তুলেছিল। রোমানরা গ্রিক সভ্যতার পতন ঘটানোর পর গণিতের অভূতপূর্ব বিকাশ থেমে যায়। রোমান সাম্রাজ্যে গণিতের সেরকম প্রয়োজন ছিল না। তাদের সংখ্যাগুলোতে আলাদা রূপ ছিল না। এবং রোমান অক্ষর দিয়ে সেগুলো প্রকাশ করা হতো। অনাবশ্যকভাবে জটিল এবং অবৈজ্ঞানিক রোমান সংখ্যা এখনো বেঁচে আছে এবং ঘড়ির ডায়াল বা অন্যান্য জায়গায় মাঝে মাঝে আমরা তার ব্যবহার দেখতে পাই।

ইসলামি সভ্যতার বিকাশ হওয়ার পর ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, যেটি আমাদের আধুনিক দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। এই সংখ্যা পদ্ধতিকে Hindu- Arabic সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এখানে উল্লেখ্য যে শূন্য ব্যবহারের ফলে সংখ্যা পদ্ধতিতে বিস্ময়কর অগ্রগতি হলেও খ্রিষ্টীয় শাসকেরা শূন্যকে শয়তানের রূপ বিবেচনা করায় দীর্ঘদিন সেটাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল! আমাদের হাতে দশ আঙুল থাকার কারণে দশভিত্তিক সংখ্যা গড়ে উঠলেও দুই, আট কিংবা ষোলোভিত্তিক সংখ্যাও আধুনিক প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

Content added By